পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক পরিচিতি
( পূর্ব নাম- “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্প [ “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প ] )
১। সূচনা: বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য ১৯৯৬-২০০১ সালে “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় পাইলটিং করা হয়। ২০০১ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করা হয় এবং প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
২) ২০০৯ সালে প্রকল্পটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কিভাবে সাধারণ গরিব মানুষকে উৎপাদনের মূল স্রোত ধারায় আনা যায়। কিভাবে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা যায়, কিভাবে প্রতিটি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়, কিভাবে গ্রামের সঞ্চয় গ্রামে বিনিয়োগ করে গরিব মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা যায়, কিভাবে মহিলাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে তাদের আয় বৃদ্ধি করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চত করা যায়। এমন চিন্তা থেকে তিনি দ্বিতীয়বারের মত আবার “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প চালু করা হয়। এবার গ্রামের গরিব মানুষকে সঞ্চয়মুখী করতে/সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রকল্পে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
৩। পরবর্তীতে “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্প নামকরণ করা হয়। “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পটি জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০১৪ পর্যন্ত ১১৯৭.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হয় যা নিম্নরূপ:
ক) ১ম পর্যায়ঃ-
দেশের পল্লী এলাকার প্রতিটি বাড়িকে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনমুখি ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রতিটি গ্রাম সমিতিকে সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। দেশের ৮৫,০০০ গ্রামে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় । পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে ০৪.০৮.২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থায়নের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৪ বার সংশোধন করে ১ম পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ এবং অর্থের বৃদ্ধি করা হয়। মূল প্রকল্পে সমিতি সদস্যদের বাড়িতে খামার স্থাপনে কিছু সম্পদ সহায়তা দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়। কিন্তু সম্পদ বিতরণে মারাত্মক বৈষম্য দেখা দেয়ায় ১ম পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশলে পরিবর্তন করা হয়। সম্পদ বিতরণের পরিবর্তে দরিদ্র সদস্যদের সঞ্চয়মুখি করতে সঞ্চয়ের বিপরীতে কল্যাণ অনুদান (২০০ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে ২০০ টাকা) প্রদান ও সমিতিকে বাৎসরিক ১.৫০ লক্ষ টাকা করে দুই বছরে ৩.০০ লক্ষ টাকার ঘুর্ণায়মান তহবিল প্রদান করে প্রতি সমিতির জন্য একটি স্থায়ী তহবিল সৃষ্টি এবং ঐ তহবিল সমিতির সদস্যদের মধ্যে নিজ বাড়িতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষিজ খামার স্থাপনে ঘুর্ণায়মান বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রকল্পের পরিসর পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হয়। নীচে সংক্ষেপে সংশোধনীসমূহের কারণ বর্ণনা করা হলোঃ
৩.১) ১ম সংশোধন (জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০১৩):
মূল প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১১৯৭০০.০০ লক্ষ টাকা। প্রকল্প মেয়াদ জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০১৪ পর্যন্ত। প্রকল্পটি ৪৮২ উপজেলার ১৯২৮ ইউনিয়নের ৯৬৪০ গ্রামের অন্তর্গত ৫,৭৮,৪০০টি পরিবারকে প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে নির্বাচন করে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। সমিতি কিছু সদস্যদের মধ্যে গরু, ঢেউটিন এবং হাঁস-মুরগি, গাছের চারা ও শাক সবজির বীজ বিতরণ করায় সদস্যদের মধ্যে প্রাপ্তির বৈষম্যের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই ১ম সংশোধনীতে সম্পদ বিতরণের পরিবর্তে প্রতিজন সদস্যের নিজস্ব সঞ্চয় জমার বিপরীতে সমপরিমাণ (২০০/- টাকা মাসিক অনুর্ধ ২৪ মাস) কল্যাণ অনুদান এবং সমিতিতে বাৎসরিক ১.৫০ লক্ষ টাকা করে (অনুর্ধ্ব ২ বছর) আবর্তক ঋণ তহবিল প্রদান শীর্ষক দুইটি উপাদান সংযুক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। একই সাথে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ৪৮৩ টি উপজেলার ১৯৩২ টি ইউনিয়নের ১৭৩৮৮ টি ওয়ার্ডে ১টি করে ১৭৩৮৮ টি গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন সৃজন এবং ১০,৪৩,২৮০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর কমিয়ে জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০১৩ করা হয় এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৪৯২৯২.১২ লক্ষ টাকা। সদস্যদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে সরকারী সহায়তায় সমিতিভিত্তিক স্থায়ী তহবিল সৃষ্টি ও তা সদস্যদের মধ্যে বিনিয়োগ করে আয়সৃজনপূর্বক দারিদ্য বিমোচনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের শুরুতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সহযোগী সংস্থা হিসেবে “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের কাজে সহযোগিতা করেন। পরর্তীতে প্রকল্পের জনবল নিয়োগ করা হয়।
৩.২) ২য় সংশোধন (জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০১৬):
২য় সংশোধনী 'একনেক' কর্তৃক ৩০/০৭/২০১৩ তারিখে অনুমোদিত হয়। এ সংশোধনীতে প্রকল্প কার্যক্রম সারাদেশে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। নতুন কোন কম্পোনেন্ট যুক্ত হয়নি। প্রকল্প কার্যক্রম দেশের ৪৮৫ উপজেলার ৪৫০৩ ইউনিয়নের ৪০৫২৭টি ওয়ার্ডের ১টি করে গ্রামে সম্প্রসারণ করে উপকারভোগী নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ জন। অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩১৬২৯৬.৩৮ লক্ষ টাকা করা হয়।
৩.৩) পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন-২০১৪: প্রকল্প বাস্তবায়নকালে ক্ষুদ্র সঞ্চয় দর্শন অনুসরণে বাস্তবায়নাধীন আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প দরিদ্র মানুষকে স্থায়ী তহবিল সৃষ্টিতে ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে যে ব্যাপক আর্থিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে এবং আর্থিক অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত হয়েছে তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য প্রত্যাশা তৈরীর পেক্ষাপটে ২০১৪ সালে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন, ২০১৪ (২০১৪ সালের ৭নং আইন) এর আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’।
৩.৪) ৩য় সংশোধন (জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০২০):
প্রকল্পের ৩য় সংশোধন 'একনেক' কর্তৃক ২৫/১০/২০১৬ তারিখে অনুমোদিত হয়। এ সংশোধনীতে প্রকল্প কার্যক্রম সারাদেশে আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। প্রকল্প কার্যক্রম দেশের ৪৯০ উপজেলার ৪৫৫০ ইউনিয়নের ৪১০৫০টি ওয়ার্ডের ১,০১,০৪২ টি গ্রামে সম্প্রসারণ করে সমিতি গঠ এবং ৬০,৬২,৫২০ টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৮০১০২৭.০৫ লক্ষ টাকা করা হয়। ০৮-১২-২০১৫ তারিখের একনেক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (কুমিল্লা) এর' সমন্বিত কৃষি কর্মকান্ডের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার লালমাই- ময়নামতি পাহাড়ী এলাকার জনগণের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন' এবং সমবায় অধিদপ্তরের 'সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্প দুটিকে আলোচ্য 'আমার বাড়ি আমার খামার' মডেলে প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য পৃথক কম্পোনেন্ট হিসেবে আরডিপিপি-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ১.০০ লক্ষ ভিক্ষুক পরিবারকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে পুনর্বাসন এবং প্রকল্পের যে সকল সুবিধাভোগী হতদরিদ্র অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আরও উন্নত ও টেকসই করার জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৩.৫) ৪র্থ সংশোধন (জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০২১):
প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এডিপি বরাদ্দ কাঙ্খিত মাত্রায় না পাওয়ায় সদস্যদের সঞ্চয়ের বিপরীতে কল্যাণ অনুদান ও সমিতিসমুহকে পর্যাপ্ত ঘূর্ণায়মান তহবিল প্রদান করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প কার্যক্রম শুধুমাত্র পল্লী এলাকায় বাস্তবায়িত হওয়ায় উপজেলা/জেলা লেভেল পৌরসভায় যেখানে পল্লী এলাকার সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান সেখানে দরিদ্র মানুষদের প্রকল্পের আওতায় আনার দাবী উত্থাপিত হয়। এ ছাড়া অনেক জায়গায় বিভিন্ন কারণে এক সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত হবার মত ৬০ জন সদস্য পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু কম্পোনেন্ট বরাদ্দ অপ্রতুলতায় বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না। এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্প ৪র্থ বারের মত সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। নতুন কোন কম্পোনেন্ট যুক্ত হয়নি। কিছু কম্পোনেন্ট বাদ দেয়া হয়েছে এবং ব্যয় কমানো হয়েছে।
২৮ জুলাই, ২০২০ তারিখে প্রকল্পের ৪র্থ সংশোধনী একনেক কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে। সংশোধনীতে প্রকল্প কার্যক্রম দেশের ৪৯২ উপজেলার ৪৫৫০ টি ইউনিয়নের ৪০৯৫০টি ওয়ার্ডে এবং উপজেলা/জেলা পর্যায়ের ৩২৭টি পৌরসভায় সম্পসারণ করা হয়। প্রাক্কলিত ব্যয় ৮০১০২৭.০৫ লক্ষ টাকা হতে কমিয়ে ৭৮৮৫২৭.০৫ লক্ষ টাকা করা হয় এবং বাস্তবায়নকাল জুলাই, ২০০৯ হতে জুন, ২০২১ পর্যন্ত পুনঃধনির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের নাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে একটি বাড়ি একটি খামার নাম পরিবর্তন করে আমার বাড়ি আমার খামার করা হয়। সমিতি সদস্য সংখ্যা নারী পুরুষ অনুপাত (২:১) ঠিক রেখে ৩০ হতে ৬০ জন করা হয়। সমিতি সংখ্যা ১,০১,০৪২ হতে বাড়িয়ে ১২০,০০০ এবং উপকারভোগী ৬০,৬২,৫২০ হতে কমিয়ে ৫৪.৬০ লক্ষ পুন:নির্ধারণ করা হয়।
৪। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ধারনা, ডিজাইন, অবস্থান এবং সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা (Rationale of the project in respect of Concept, Design, Location and Timing):
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত ছিল। ২০০৯ সালে প্রকল্প গ্রহণ কালে জাতীয় দারিদ্যের হার ছিল ৩৭.৫%। পল্লী এলাকায় দারিদ্যের হার আরও বেশী। দেশের সর্বত্র পল্লী এলাকায় দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত পোভার্টি ম্যাপ অনুসারে কোন পল্লী এলাকা দারিদ্র্য শুন্য না। তাই প্রকল্পের কার্যক্রম সারাদেশের ৮৫০০০ গ্রামে সম্প্রসারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যুগান্তকারী এবং সময়োপযোগী। অপরদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে ০৪.০৮.২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় ৮৫০০০ গ্রামে একই সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিবর্তে অর্থায়নের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে পর্যায়ভিত্তিক প্রকল্পটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের কার্যক্রম দেশের সকল উপজেলার সকল ইউনিয়নের সকল গ্রামে এবং উপজেলা পর্যায়ের ৩২৭টি পৌরসভাবে অন্তর্ভুক্ত করায় ৫৬.৭৭ লক্ষ দরিদ্র পরিবার এ প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন এবং এখন তারা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪৯% শেয়ারের মালিক। ব্যাংক হতে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে অত্যন্ত সহজ কিস্তি সুবিধায় আর্থিক সেবা পাচ্ছেন। তাই প্রকল্পে ধারণা, ডিজাইন, অবস্থান ও সময় নির্ধারণ অত্যন্ত যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান।
৫। “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প হতে “আমার বাড়ি আমার খামার” প্রকল্পে রূপান্তরঃ গত ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ তারিখে প্রদত্ত অনুশাসন অনুযায়ী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প (৩য় সংশোধনী) এর নাম পরিবর্তন করে “আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প (৩য় সংশোধনী)” করার বিষয়ে নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তা পরিবর্তন করা হয়।
৬। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের স্বীকৃতি (সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক Manthan Award, 2013 অর্জন): “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প দরিদ্র মানুষকে তথ্য প্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করণের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশংসিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটি গত ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত তথ্য-প্রযুক্তি মেলায় সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক Manthan Award, 2013 পদকে ভূষিত হয়েছে। দু'দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় এতদঞ্চলের ৩৬ টি দেশের সর্বমোট ১৬৭ টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। একটি বাড়ি একটি খামার e-financial inclusion-এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে অনলাইন ব্যাংকিং-এ সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছে। ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব সালমান খুরশিদ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
৭। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প) এর মাইক্রোফিন্যান্স সিস্টেমঃ
৭.১) একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি গ্রামে ৬০ টি দরিদ্র পরিবারের একজন করে সদস্য নিয়ে একটি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে । যার মধ্যে ৪০ জনই নারী সদস্য। সপ্তাহে ৫০ টাকা অর্থাৎ মাসে ২০০ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে সরকার তাকে ২০০ টাকা বোনাস দিয়েছে। তাছাড়া প্রতি সমিতিতে বছরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘূর্ণায়মান তহবিল প্রদান করা হয়েছে। এভাবে সরকার দু’বছরে গ্রাম উন্নয়ন সমিতিগুলোতে মোট ৯ লক্ষ টাকা করে স্থায়ী তহবিল গড়ে দিয়েছে। উক্ত কার্যক্রম চলমান থাকার কারণে সমিতির তহবিল দিন দিন বাড়ছে।
৭.২) প্রকল্পের আওতায় সমিতি গঠন, সদস্য ভর্তি, সদস্যদের সঞ্চয় জমা, সঞ্চয়ের বিপরীতে প্রকল্প হতে কল্যাণ অনুদান বিতরণ, প্রতি সমিতিতে ঘূর্ণায়মান তহবিল বিতরণ, ঋণ বিতরণ ও আদায় ইত্যাদি কাজ প্রকল্পের অনলাইন এমআইএস সফটওয়ার এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সমবায় অধিদপ্তরের "সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন" প্রকল্পটি এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, কুমিল্লার "সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন" প্রকল্পটি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের পৃথক কম্পোনেন্ট হিসেবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অধীনে রয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন হতে সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক সফটয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সেবা প্রদান করেছে।
৭.৩) “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের (আমার বাড়ি আমার খামার) সমিতির সদস্যদের সাথে লেনদেনের কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক ছিল। গত ০৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের (বর্তমান- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক) অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
৮। এটি এখন স্বীকৃত যে, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সঞ্চয় দর্শন বাস্তবায়ন করে বিগত ১০ বছরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যেমন বিপুল পরিমাণ স্থায়ী তহবিল সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে তেমনি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়েছে। যারা পূর্বে কোন প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবা বহির্ভুত ছিল। ২০১৭ সালে সরকারের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের উপর নীবিড় পরীবিক্ষণ সমীক্ষা পরিচালনা করে। মূল্যায়নে দেখা গেছে প্রকল্পের সমিতিভুক্ত হবার পর ৩১.৪% পরিবারে জমির মালিকানা বৃদ্ধি পেয়েছে, ৬৫.৩% পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, ৭৪.২% পরিবারের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবারের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
৯। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩১৩ কোটি টাকা, প্রতিটি শেয়ারের মূল্যমান ১০০ টাকা। আইন অনুযায়ী ব্যাংকের ৫১% শেয়ারের মালিক সরকার এবং ৪৯% শেয়ারের মালিক সমিতি সমূহ। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড এর সদস্য সংখ্যা ১৯ জন, তন্মধ্যে সরকার কর্তৃক নির্বাচিত ১০ জন এবং প্রতি প্রশাসনিক বিভাগ হতে সমিতি কর্তৃক নির্বাচিত ০৮ জন ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ০১ জন। ব্যাংকের মূল লক্ষ্য দেশের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে নিয়ে সমিতি করে সমিতির তহবিল গঠন, সদস্যদের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন, নারীদেরকে আয়বধর্ক কাজে নিয়োজিত করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, সমিতি ও সদস্যদের সঞ্চয় ও অর্জিত সম্পদের লেনদেন ও রক্ষণাবেক্ষণ, ঋণ ও অগ্রিম প্রদান ইত্যাদি কার্যাদি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশ থেকে দারিদ্য বিমোচন করা। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রতিটি সমিতিতে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।
১০। বিগত ২২ জুন, ২০১৬ তারিখে ব্যাংকের ১০০ টি শাখা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের (২য় সংশোধনী) আওতায় ৩০ জুন, ২০১৬ পর্যন্ত গঠিত সমিতিসমূহের সদস্য, তহবিল, দায়-দেনা ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। তারপর, বেশি সংখ্যক দরিদ্র লোকদের প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রকল্পের (৩য় সংশোধনী) পাশ হয়। ১৩/০৭/২০১৭ তারিখ হতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প (৩য় ও ৪র্থ সংশোধনী) জুন, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংক এবং প্রকল্পের সাথে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী পাশাপাশি পরিচালিত হয়। ৩০ জুন, ২০২১ তারিখ থেকে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প বিলুপ্ত হয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এককভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
১১। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের অর্জন (৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত): প্রকল্পের আওতায় সমিতি গঠিত হয়েছে- ০১ লক্ষ ২০ হাজার ৩২৫ টি, উপকারভোগী সদস্য পরিবার- ৫৬ লক্ষ ৭৭ হাজার, সদস্য সঞ্চয়- ২০৮৬ কোটি টাকা, সরকার প্রদত্ত বোনাস- ২০০০ কোটি টাকা, ঘূর্ণায়মান তহবিল- ৩২০০ কোটি টাকা, মোট ঋণ গ্রহণকারী উপকারভোগীর সংখ্যা- ৪৫ লক্ষ ৯৩ হাজার জন, মোট ঋণ বিতরণ- ১১০৪১ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণ বিতরণ- ৪৯০ কোটি টাকা, প্রকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়বর্ধক খামারের সংখ্যা- ৩৩ লক্ষ ৭৩ হাজার, মোট তহবিল- ৭৬০৯ কোটি টাকা।
১২। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় ৩০/০৬/২০১৬ তারিখের পূর্বে গঠিত ৪০,২১৬টি সমিতির দায় ও সম্পদ ইতোমধ্যে ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে গঠিত সমিতি সমুহের মধ্যে তহবিল গঠন শেষে পর্যায়ক্রম ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রকল্প হতে সকল সমিতি স্থানান্তরের পর মোট সমিতি সংখ্যা ১.২০ লক্ষ এবং সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫৩.৭৮ লক্ষ ছিল। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সমিতি সমুহ পরিচালিত হচ্ছে।
১৩। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সমন্ধে:
১৩.১) ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৪৯০ টি যার মাধ্যমে সমিতি সমূহের সদস্যদের আর্থিক সেবা প্রদান করা হয়। উপজেলা সদরে ব্যাংকের নিজস্ব ভবনে শাখা স্থাপন করা হয়েছে এবং জেলা সদর শাখায় অধিকাংশ নিজস্ব ভবনে ১ম/২য়/৩য় তলায় জেলা কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। জেলা কার্যালয় শাখাগুলোকে তদারকি করে থাকে। এছাড়াও, শাখাসমূহের অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে ২২টি নিরীক্ষা কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি বিভাগে ব্যাংকের বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যাংকের অনুমোদিত জনবল ১২,২৪৩ জন। প্রতি ইউনিয়নে ব্যাংকের মাঠ সহকারী কর্মরত রয়েছে।
১৩.২) কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ব্যাংক কর্তৃক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ব্যাংক উহার নিজস্ব অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সদস্যদের আর্থিক সেবা প্রদান করছে। অন্যান্য ব্যাংকে গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে সেবা গ্রহণ করেন কিন্তু এ ব্যাংকের মাঠ সহকারীগণ নিজেরাই সেবা দিতে গ্রাহকের কাছে যান। ফলে সদস্যদের শ্রম ও ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে ঋণের জন্য অধিক সুদে ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কাছে যেতে হচ্ছেনা। গ্রাম সমিতির সদস্য হয়ে প্রান্তিক ও দরিদ্র নারী- পুরুষ গঠিত তহবিল ব্যবহার করে স্বাবলস্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তাদের ক্ষমতায়নও হচ্ছে। ব্যাংকের বিভিন্ন ঋণ প্রোডাক্ট রয়েছে, সেগুলোর সেবামূল্য মাত্র ৪%-৮% এবং ৩ ধরণের মাসিক সঞ্চয় স্কীমের মুনাফার হার ৪%-১০%। গ্রাম সমিতির সদস্য তথা ব্যাংকের গ্রাহকগণ অত্যন্ত দরিদ্র শ্রেণীর। এসকল সদস্যগণ তাঁদের বাড়িতে আয়বধর্ক কৃষিজ খামার স্থাপন করে আয়বৃদ্ধি পূর্বক দারিদ্র্য বিমোচনে সচেষ্ট আছেন। ব্যাংকের আওতায় সকল সমিতির আর্থিক লেনদেন অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ভিশন ২০২১ অর্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
১৩.৩ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা (৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত):
(টাকার পরিমাণ: লক্ষ টাকায়) |
||||
ক্র. নং |
বিবরণ |
পুরুষ সদস্য |
নারী সদস্য |
মোট |
০১ |
সদস্য সংখ্যা |
২০.১০ (লক্ষ) |
২৮.৯২ (লক্ষ) |
৪৯.০২ (লক্ষ) |
০২ |
ঋণ গ্রহণকারী সদস্য |
১২.৯৮ (লক্ষ) |
১৮.৬৮ (লক্ষ) |
৩১.৬৬ (লক্ষ) |
০৩ |
ঋণের পরিমাণ/স্থিতি |
৩৭৪৬৬৫.৫২ (লক্ষ) |
৫৩৯১৫২.৮২ (লক্ষ) |
৯১৩৮১৮.৩৪ (লক্ষ) |
০৪ |
সঞ্চয়ের পরিমাণ |
১২৫০৮৩.৯৯ (লক্ষ) |
১৭৯৯৯৮.৯১ (লক্ষ) |
৩০৫০৮২.৯০ (লক্ষ) |
০৫ |
মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ |
১৭৫৫৬০.৭৯ (লক্ষ) |
২৫২৬৩৬.২৬ (লক্ষ) |
৪২৮১৯৭.০৫ (লক্ষ) |
০৬ |
শ্রেণীবিন্যাসকৃত ঋণ |
৭৯৯২৭.৮৮ (লক্ষ) |
১১৫০১৮.১৮ (লক্ষ) |
১৯৪৯৪৬.০৬ (লক্ষ) |
০৭ |
সদস্য প্রতি মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ= ২৮,৮৬৩.৫০ টাকা |
১৪। নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাংকের ভুমিকা: প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মলগ্ন থেকেই নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। সদস্যভুক্ত হওয়ার আগে যেসকল নারী শুধুমাত্র গৃহিণী ছিলেন, আর্থিক ও সামাজিক বিষয়ে যেখানে তাদের পরিবার প্রধানের উপার্জন ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে হতো, সেখানে ৩৪.০৬ লক্ষ নারী ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে তারা উপার্জনমূলক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতায় অবদান রাখছেন। এতে করে তাদের পরিবারে ও সমাজে গ্রহণযোগ্যতাসহ উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ বাড়ছে। আজ নারীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষতা, কর্মমুখীতা, নারীর জীবন থেকে বাদ পড়েছে পিছিয়ে থাকা আর আড়ষ্টতা নামক কিছু বৈশিষ্ট্য।
১৫। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অবদান:
বাংলাদেশে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৫-২০২০) এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫) এর বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অবদান রাখছে:
(ক) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক রূপান্তর এবং কর্মসৃজনে অগ্রগতি;
(খ) দারিদ্র্য ও আয় অসমতা হ্রাসে অগ্রগতি;
(গ) নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক সুরক্ষা;
(ঘ) সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি;
(ঙ) মানব সম্পদ উন্নয়নে অগ্রগতি প্রভৃতি।
১৬। এসডিজি অর্জনে ব্যাংকের ভুমিকা: এসডিজি অভীষ্ট-১ (দারিদ্র্য বিলোপ); অভীষ্ট-২ (ক্ষুধা মুক্তি) এবং অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) অর্জনে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
১৭। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ ও ভিশন ২০৪১ (প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১) অর্জনে ভুমিকা: উচ্চ আয়ের সোপানে পৌঁছাতে সরকারের ভিশন-২০৪১ এর পরিকল্পনায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো, দারিদ্র্য শূন্য দেশ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য টেকসই কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পায়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান এবং ই-আর্থিক সেবা ইত্যাদি বাস্তবায়নে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
১৮। দেশীয় বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি:
ব্যাংক বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের নিম্নোক্ত খাতগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে:
ইস্যু/সূচক |
পুরুষ (%) |
মহিলা (%) |
আয়ের বিকল্প উৎস তৈরী |
৯১.৭৭ |
৮৯.২২ |
খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি |
৮৬.৮৯ |
৮৬.৪৭ |
দুর্যোগ মোকাবেলা দক্ষতা বৃদ্ধি |
৬৫.২৪ |
৬৩.২২ |
শিশুদের লেখাপড়ার সূযোগ |
৭৪.৭০ |
৭১.৬৭ |
সদস্যদের চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য সচেনতা |
৭২.৮৬ |
৭৩.৭৯ |
ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা |
৮৯.০৩ |
৮৭.৩২ |
বাসগৃহের উন্নতি |
৬৮.৯০ |
৬৪.৬৭ |
বাল্যবিবাহ হ্রাস |
৭৬.৮৩ |
৭৫.৬৮ |
নারী নির্যাতন হ্রাস |
৮০.৭৯ |
৮০.৭৬ |
নারীর ক্ষমতায়ন |
- |
৮০.৩৪ |
পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা |
৭০.৪৩ |
৬৮.৬৯ |
১৯। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগে (ভয়েজ ইউজার ইন্টারফেস) স্বীকৃতি: অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন দপ্তর সংস্থা সমূহের অংশ গ্রহণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে ২১ মে, ২০২৪ তারিখে অর্থ বিভাগের মাল্টিপারপাস হলরুমে আয়োজিত উদ্ভাবনী উদ্যোগ প্রদর্শনী (শোকেসিং) ও শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ নির্বাচনী অনুষ্ঠানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ইনোভেশন টীম কর্তৃক প্রদর্শিত “ভয়েজ ইউজার ইন্টারফেজ” উদ্যোগটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ ২০২৩-২০২৪ খেতাবে ভূষিত হয়েছে।
২০। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঋণ প্রোডাক্টসমূহ
ক্রমিক নং |
ঋণের নাম |
সর্বনিম্ন পরিমাণ |
সর্বোচ্চ পরিমাণ |
সার্ভিস চার্জ |
মেয়াদোত্তীর্ণ সার্ভিস চার্জ |
গ্রেস পিরিয়ড |
ঋণের সর্বোচ্চ সময়কাল গ্রেস পিরিয়ড ব্যতীত |
ঋণের সর্বোচ্চ সময়কাল গ্রেস পিরিয়ড সহ |
১. |
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ (এসএমই) |
৫০০০০ |
১০০০০০ |
৫% |
১০% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
১০০০০১ |
১৫০০০০ |
৫% |
১০% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
||
১৫০০০১ |
২০০০০০ |
৫% |
১০% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
||
২০০০০১ |
২৫০০০০ |
৫% |
১০% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
||
২. |
এসএমই-২
|
৫০০০০ |
১০০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
৩. |
এসএমই-৩ |
৫০০০০ |
১০০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
১০০০০১ |
১৫০০০০ |
৮% |
৮% |
৩ |
২১ মাস |
২৪ মাস |
||
১৫০০০১ |
২০০০০০ |
৮% |
৮% |
৩ |
২১ মাস |
২৪ মাস |
||
২০০০০১ |
২৫০০০০ |
৮% |
৮% |
৩ |
২১ মাস |
২৪ মাস |
||
৪. |
নিরাপদ খাদ্য (স্বল্প মেয়াদী) |
৭০০০০ |
২৫০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
৫. |
নিরাপদ খাদ্য (দীর্ঘ মেয়াদী) |
৭০০০০ |
২৫০০০০ |
৮% |
৮% |
৬ |
১৮ মাস |
২৪ মাস |
৬. |
পল্লী এ্যাম্বুলেন্স |
২৫০০০০ |
২৫০০০০ |
৮% |
৮% |
১ |
৩০ মাস |
৩১ মাস |
৭. |
ক্ষুদ্র ঋণ (বন) |
৪০০০০ |
৬০০০০ |
৫% |
৫% |
৬ |
১২ মাস |
১৮ মাস |
৬০০০১ |
১০০০০০ |
৫% |
৫% |
৬ |
১২ মাস |
১৮ মাস |
||
৮. |
ক্ষুদ্র ঋণ (পিএসবি) |
৫০০০০ |
১০০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
৯. |
কর্মসৃজন ঋণ |
১০০০০ |
৫০০০০ |
৫% |
৫% |
৬ |
১২ মাস |
১৮ মাস |
১০. |
কর্মসৃজন ঋণ-২ |
১০০০০ |
৫০০০০ |
৪% |
৪% |
৬ |
১৮ মাস |
২৪ মাস |
১১. |
শস্যগোলা ঋণ |
১০০০০ |
৫০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
৬ মাস |
৬ মাস (এক কালীন পরশিোধ) |
১২. |
গবাদি পশু পালন ঋণ |
১২০০০০ |
১২০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
২৪ মাস |
২৪ মাস (০১ বছর অন্তর ০২ ধাপে পরশিোধ) |
১৩. |
ক্ষুদ্র ঋণ (সমিতি) |
৫০০০ |
৬৫০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
৬৫০০১ |
৭০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
||
৭০০০১ |
৮০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
||
৮০০০১ |
১০০০০০ |
৮% |
৮% |
০ |
১২ মাস |
১২ মাস |
২১। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সেভিংস প্রোডাক্ট সমূহঃ
ক্রমিক নং |
সঞ্চয় প্রোডাক্টের নাম |
(স্লাব) মাসের সংখ্যা |
সর্বনিম্ন পরিমাণ |
সর্বোচ্চা পরিমাণ |
মুনাফা হার |
১. |
মাসিক সঞ্চয় স্কীম (পিএসবি-এমএসএস) |
৩৬ |
২০০ টাকা |
৫০০০ টাকা |
৭.৫০% |
৬০ |
|||||
১২০ |
|||||
২. |
স্টুডেন্ট সেভিংস স্কীম (এসএসএস) |
৬০ |
৫০ টাকা |
৩০০ টাকা |
৭%-১০% |
৮৪ |
|||||
১৪৪ |
|||||
৩. |
সমিতির সাধারণ সঞ্চয় |
প্রযোজ্য নয় |
যেকোন পরিমাণ |
৪% |
|
৪. |
এসএনডি (এমএফএম, সমিতির হিসাব) |
প্রযোজ্য নয় |
যেকোন পরিমাণ |
প্রযোজ্য নয় |
|
৫. |
এসএনডি (সিবিএস, পল্লী লেনদেন) |
প্রযোজ্য নয় |
যেকোন পরিমাণ |
প্রযোজ্য নয় |
২২। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের করণীয়ঃ
১. সকল দরিদ্র জনগণকে সমিতির সদস্যভুক্ত করা।
২. দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা।
৩. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন যাত্রার মান আধুনিকীকরণ এবং গ্রাহকদেরকে ঘরে বসে ব্যাংকিং লেনদেন করার ব্যবস্থা করা।
৪. পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে ঋণ প্রদান।
৫. নারীদের ক্ষমতায়ন করা ও উদ্যোক্তা তৈরীতে নারী সদস্যদের অগ্রাধীকার প্রদান, জেন্ডার সমতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ।
৬. সকল দরিদ্র জনগণকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্যতা শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসা।
৭. (অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
৮. সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন।
৯. স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে পল্লী এলাকার জনগণের অর্থনৈতিক লেনদেন ডিজিটালাইজেশন।
১০. চাষাবাদ পর্যায়ে বিনিয়োগ করা;
১১. উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ পর্যায়ে বিনিয়োগ করা;
১২. সরকারি/আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানসম্মত বীজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান;
১৩. স্থানীয় উপজেলা (কৃষি/মৎস্য/প্রাণী) কর্মকর্তাদের সহায়তা/সহযোগিতায় সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
১৪. বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা বৈদেশিক বাণিজ্য বহুলাংশে প্রবাসীদের প্রেরিত বৈদেশিক আয় বা রেমিটেন্স এর উপর নির্ভরশীল। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এর সেবা কার্যক্রম বাংলাদেশের প্রতিটা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম, এমনকি পাড়া, মহল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত। কাজেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক পরিবার ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স যদি এই ব্যাংকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে হুন্ডি ব্যবসায়ের মত অন্যান্য নেতিবাচক কর্মকান্ড বহুলাংশে প্রতিরোধ করা।
১৫. ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প সমূহ গড়া হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের সুফলভোগীদেরকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের থেকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে জনসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
১৬. তৃণমূল জনগোষ্ঠির ব্যাংক হিসেবে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদি উৎপাদন, সংরক্ষণ পর্যায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে উল্লিখিত দ্রব্য সামগ্রীর চাহিদা, যোগান, আমদানি-রপ্তানী প্রভৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা।